বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করায় গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করা হতে পারে। দলীয় ও মেয়র পদ হারানোর পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে গাজীপুর সিটি মেয়রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। অনুষ্ঠানের কারণের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। মেয়র যা বলেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার শাস্তি না হলে দলের চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভবিষ্যতে, আরও মানুষ এই ধরনের পর্যবেক্ষণ করার সাহস করতে পারে। তাই তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দিকে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এত কম বয়সে মেয়র হয়ে হতবাক জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও রেকর্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই অডিওতে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা বানোয়াট তথ্য তুলে ধরেন। এতে বঙ্গবন্ধুকেও ছোট করা হয়েছে। অডিও ফাঁসের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বোমা মেরেছে। তারা মেয়রের কুশপুত্তলিকা দাহসহ বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। তার বক্তব্য বিশ্বাস করতে চান না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য, বিষয়টি যে সত্য নয় তা মেয়রকেই প্রমাণ করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদের পর গত ৩ অক্টোবর গাজীপুরের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে শো ইস্যুটির নোটিশ পাঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে শো’র বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মেয়র জাহাঙ্গীর। তবে গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
পরদিন (২৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ মহাসচিব ওবায়েদ কাদির বলেন, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ নিয়ন্ত্রণমূলক শৃঙ্খলা ভঙ্গের আরও কিছু অভিযোগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তোলা হবে। আওয়ামী লীগের। গত ১৯ নভেম্বর জনভবনে কমিশন ড.
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের সত্যতা জানতে পেরে তিনি হতবাক। সমস্যা সমাধানে গত ১৯ নভেম্বর কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়। সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই তরুণ মেয়রের জীবন রহস্যের আবরণ। এক দশক আগে হারিকেন ডিস্ট্রিক্টে মানসী বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ফজলুর রহমান। আর এখন তার ভাগ্য নেই, বিশাল জমিতে প্রাসাদ বানিয়েছেন। বাড়ির গ্যারেজে সাজানো হয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। এবং কর্মীদের ঘেরা গাড়ির কনভয় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। যদিও উল্লেখ করার মতো কোনো দৃশ্যমান কাজ নেই। স্থানীয়দের দাবি, তার প্রধান আয়ের উৎস শিল্পনগরী গাজীপুরে চাঁদাবাজি এবং আদালত তাকে জমি প্রদান করে। গুজব রয়েছে যে তাকে ছাড়া ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব। এবং যখন নতুন শিল্প তৈরির কথা আসে, কোন শব্দ নেই। কৌশলটি হবে জমি জমাকে জটিল করে তোলা। এরপর তাকে বাড়িতে ডেকে বন্দোবস্তের নামে ক্লাসে নিয়ে আসা হয়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একজনের আনুকূল্য পেয়ে অন্যদের খুব একটা পাত্তা দেননি। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোয়াক্কা করেন না, যারা তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার চেষ্টা করেছেন তাদের তিনি বিভিন্নভাবে শাস্তি দিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (এলাকা ৪) নির্বাহী প্রকৌশলী দিলওয়ার হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ইঞ্জিনিয়ার ডেলাওয়্যার তার ছেলেকে (নরন নবী) বলেছিলেন যে তিনি আর কাজ করবেন না। খুব বেশি চাপ সহ্য হয় না। মোবাইল ফোনে কল করার জন্য তাকে অনেকবার চাপ দেওয়া হয়।
মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিধি বিশাল। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হলো আবাসন প্রকল্প আত্মসাৎ, ভূমিদস্যুদের সঙ্গে যোগসাজশ, জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, অবৈধ দখলদারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, নগর ব্যবসার লাইসেন্স নবায়নে অনাগ্রহ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।
জাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী আজমতুল্লাহ খান গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী কেন্দ্রীয় লীগ মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতি এবং দলভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেবে। শৃঙ্খলা আওয়ামী লীগ কখনো অন্যায়ের কাছে হার মানেনি। যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, এর ভাবমূর্তি নষ্ট করবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করবে তাদের জন্য আওয়ামী লীগে কোনো স্থান থাকবে না।
গাজীপুর সিটি কাউন্সিলের সদস্য মামুন মন্ডল জানান, গাজীপুর শহরের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। শত শত পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় বসবাস করছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়িঘর ভাঙা ও রাস্তা নির্মাণের নামে একাধিক পরিবার মামলা করে। বিভিন্ন সময়ে মাসিক টাউন-কোম্পানি মিটিং না করে নিজেই অনেক নীতিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। না দিয়েও অনেক কাজ করেছেন। এ নিয়ে পরিষদ সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তিনি মেয়র জাহাঙ্গীরকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে এসএমএস করেও তিনি কোনো সাড়া পাননি।